বরগুনাঃ উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে। মৌসুমের শুরুতেই ডিজেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ধান উৎপাদনে কৃষকের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে।এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।
খেত প্রস্তুুত থেকে শুরু করে সেচ দেওয়া, মাড়াই করা, ফসল ঘরে তোলা, শ্রমিকের মজুরি সব ক্ষেত্রেই তাঁদের কাঁধে এখন বাড়তি খরচের বোঝা। ফলে এবার অতিরিক্ত খরচের কারণে বিগত বছরের চেয়ে আমন চাষে কৃষকরা লোকসানের শঙ্কা করছেন। এবারে মৌসুমে এ উপজেলায় ১০ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে ৩২ হাজার ৭৬২ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
অনাবৃষ্টির কারণে চলতি আমন মৌসুমে আগের তুলনায় বেশি পরিমানে ধান সেচ ও সময় লাগছে। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ আরও বাড়ছে। এ অবস্থায় মধ্যেই হঠাৎ করে ইউরিয়া সারের দাম কেজিপ্রতি বাড়ে ছয় টাকা। সেই সাথে ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১১৪ টাকা। বর্তমানে সরকার ৫ টাকা কমালেও বাজারে এখনো তার কোন প্রভাব পড়েনি। বরং আগের দামেই গুনতে হচ্ছে তাদের। এতে পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে জমি চাষেও খরচ বেড়েছে। ফলে এবার আমন চাষে বিঘাপ্রতি প্রায় দেড় হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ গুনতে হবে কৃষকদের।
গত কয়েকদিনে উপজেলার পৌরএলাকা, বিবিচিনি, কেওড়াবুনিয়া, লক্ষীপুরা, হোসনাবাদ, মোকামিয়া, বুড়ামজুমদার, কাজিরাবাদ ও কালিকাবাড়ি এলাকা ঘুরে একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, এবার আমন মৌসুমে এক বিঘা জমিতে খরচ হবে প্রায় ৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৫০ কেজি বস্তার ইউরিয়া, টিএসপি, ফসফেট ও ড্যাব সার ১১০০ টাকা এবং ৫০ কেজি বস্তার পটাশ সার ৭৫০ টাকা হিসেবে তাঁদের কিনতে হচ্ছে।
অন্যদিতে জমি প্রস্তত, শ্রমিক, হালচাষ ও চারা রোপণ করতে সাড়ে ৬ হাজার টাকা খরচ হবে। বিগত মৌসুমগুলোতে এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ এবার সার, সেচ ও হালচাষ খরচে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো।
বেতাগী পৌর এলাকার কৃষক মো: মাসুদ সিকদার জানান, তিনি বিগত আমন মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে চাষের জন্য নিতেন ১৮০ টাকা। হঠাৎ ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা হওয়ায় এবার তিনি বাধ্য হয়ে হাল চাষের দাম বাড়িয়ে প্রতিবিঘা জমি ২৫০ টাকা মূল্যে চাষ করছেন।
উপজেলার দেশান্তরকাঠী গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, এবার এক বিঘা জমিতে চারা রোপণ করতে খরচ হবে প্রায় ৬ হাজার টাকা। এরপর নিড়ানি, কীটনাশক, সারসহ কাটা-মাড়াই খরচতো রয়েছেই। কিন্তু ধান পাওয়া যাবে এর থেকে কম। সেই হিসেবে উৎপাদন খরচই উঠবে না। তাই এবার ধান চাষে লোকসান হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেওড়াবুনিয়া গ্রামের কৃষক মো. রাজিব জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করছেন। সার, জ্বালানি তেল, কৃষিশ্রমিকের মজুরি, চারা রোপণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ফসল ফলাতে তাঁকে গতবারের চেয়ে এবার বেশি টাকা ব্যয় করতে হবে। কিন্তু মৌসুম শেষে উৎপাদন খরচ উঠবে কি না, তা নিয়ে তাঁর শঙ্কা রয়েছে। যদি কোনো কারণে ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া না যায়, তাহলে তাঁকে লোকসান গুনতে হবে।
বেতাগী সদর ইউনিয়নের সার ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগেও ইউরিয়া সারের ৫০ কেজি বস্তা ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু সরকারিভাবে সারের দাম বাড়ায় এখন তা ৩’শ টাকা বেড়ে ১১০০ টাকা বস্তা বিক্রি করতে হচ্ছে। হঠাৎ সারের দাম বাড়ায় বিক্রি কিছুটা কমেছে। ফলে কৃষক এবার ধান চাষে যে টাকা ব্যয় করবে সে টাকা এবার নাও উঠতে পারে।
বেতাগী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইছা বলেণ, এখানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির চেয়ে রাসায়নিক সারের দাম বাড়ার প্রভাব বেশি পড়েছে। যে কারণে আমন চাষে কৃষকের ব্যয় বাড়বে। তবে ইউরিয়া সারের বিকল্প হিসেবে কৃষকরা ড্যাব সার ব্যাবহার করলে খরচের পরিমান কিছুটা কম হবে। তাই খরচ সাশ্রয়ে জমিতে পরিমিত মাত্রায় সার ব্যবহারের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সাইদুল ইসলাম মন্টু/এসএস